বিশ্বব্যাপী ওয়েবের বিভিন্ন তথ্যাবলী ব্যবহার করতে ওয়েব ব্রাউজারের প্রয়োজন। এটি একটি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন যার মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েব পেজ গুলিকে দেখানো হয়। এইগুলি হল অনলাইন গোপনীয়তা এবং ব্যাক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ। ওয়েব ব্রাউজারকে কেবল মাত্র নিজস্ব কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে নয়, মোবাইল ফোনেও ব্যবহার করা হয়। আপডেটেড ব্রাউজার সবসময় ব্যবহার করুন । আজকের দিনে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, মোজিলা ফায়ারফক্স, গুগল ক্রম, অ্যাপল সাফারির মত ওয়েব ব্রাউজার মোটামুটি সব কম্পিউটারেই থাকে। এবং তার সাথে এটাও সহজেই চোখে পড়ে কি ভাবে অনলাইন দুষ্কৃতিরা বেশি বেশি করে এই ওয়েব ব্রাউজারের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে তাদের দুষ্কর্ম বাড়ানোর জন্যে। মহিলা, যারা এই বিপদের সম্বন্ধে অবগত নয়, তারা স্বভাবতই ব্রাউজারগুলিকে অসাবধানতার সাথে ব্যবহার করছেন আর অবশেষে সাইবার বিপদের শিকার হচ্ছেন। তাই এই ব্রাউজারের নিরপত্তা বিষয়ক তথ্যগুলি জেনে নেওয়া উচিত।

কেন আপনার ওয়েব ব্রাউজারকে সুরক্ষিত রাখবেন

অনলাইন নিরপত্তার জন্য যে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা হল আপনার ব্রাউজারকে সুরক্ষিত করা। ক্ষতিকারক ওয়েবসাইট ব্যবহারের ফলে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে বিপদ দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। এই বিপদটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে নিচের কিছু কারনেঃ

  • বেশির ভাগ মহিলারাই বিভিন্ন ওয়েব লিঙ্কে ক্লিকের বিষয়টা সম্বন্ধে অবগত নন।
  • সফটওয়্যার এবং থার্ড পার্টি সফটওয়্যারগুলিকে একসাথে ইনস্টল করার প্রবনতা সেই বিপদকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
  • প্রচুর ওয়েবসাইট তাদের গ্রাহকদের আরও অনেক থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ইন্সটল করতে প্রলুব্ধ করে, যার একটিও আপডেট না হওয়ায় বিপদ মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
  • অনেক গ্রাহক জানেই না কি ভাবে তাদের ওয়েব ব্রাউজারকে নিরাপদ ভাবে কনফিগার করতে হয়।

ওয়েব ব্রাউসারের বিপদ সমুহ

্বাভাবিক ভাবেই কোন একটি ফিচার দ্বারা ব্রাউজারকে ডিফল্ট করা থাকে। এতে আপনার কাজে সুবিধা হয় ঠিকই, কিন্তু একই সাথে আপনার অপারেটিং সিস্টেম ও তথ্য বিশেষ ভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই সুযোগকে ব্যবহার করে অনলাইন দুষ্কৃতিরা আপনার কম্পিউটারের চালকের ভুমিকা নিয়ে নেয় বা তাতে গচ্ছিত তথ্য চুরি করে। কিছু ক্ষেত্রে উপরোক্ত সুযোগ নিয়ে আপনার কম্পিউটারে তথ্য চুরির সফটওয়্যার ইন্সটল করে তার মাধ্যমে তথ্য চুরি করে।

কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য ব্রাউজারের কার্যকারিতার মধ্যে রয়েছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহককে সেইগুলি বুঝে নিয়ে সক্রিয় বা নিস্ক্রিয় করতে হবে ব্রাউজারকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত করার জন্যে।

ব্রাউজার কুকিজ

কুকি হল একটি টেক্সটের একটা ছোট্ট অংশ যা একটি ওয়েবসাইট ব্রাউজারকে পাঠায়। ব্রাউজার সেই বিষয় বা তথ্যটি সংগ্রহ করে রাখে যাতে সেই ওয়েবসাইটের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সহজ ভাবে ব্যবহার করা যায় এবং পরের বার যখন সেই ওয়েবসাইটে আপনি ফিরে আসবেন, তখনও যাতে সেই একি বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করতে পারেন। যদি কোন ওয়েবসাইট প্রমানিকরনের জন্য কুকি ব্যবহার করে, তাহলে একজন আক্রমণকারী সহজেই সেই ওয়েবসাইটের কুকিটি হাতিয়ে নিয়ে ওয়েবসাইটের তথ্যে অনধিকার প্রবেশ করতে পারে।

সার্চ রিকোয়েস্টে কুকি স্টোর করা

  • শান্তি একটি সিনেমার ওয়েবসাইটে দেখে আর সেখানে তার পছন্দ হয় হাস্যকৌতুক। সেই ওয়েবসাইট থেকে পাঠান কুকি মনে রেখে দেয় শান্তির পছন্দ, আর যখন সে পরের বার প্রবেশ করে সেই ওয়েবসাইটে তাকে সোজাসুজি হাস্যকৌতুকের সম্ভারে নিয়ে চলে যায়।

কুকি লগিং তথ্য সংগ্রহ করে

  • যখন একটি ব্যবহারকারি কুকি গ্রহন করে তখন তার লগিং তথ্য, অর্থাৎ ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড মনে রেখে দেয় এবং সেই ওয়েবসাইটের যেখানে লগিং করা ব্যাক্তিরাই প্রবেশ করতে পারে, সেখানে সেই ব্যাক্তি প্রবেশ করতে পারে, এবং তাকে লগিং অবস্থাতে দেখায়।

পপ-আপ্স

পপ-আপ হল একটি ছোট্ট ওয়েবের অংশ যা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই আপনার ব্রাউজারে খুলে যায়। সাধারনত, সেগুলো কোন বৈধ কোম্পানির বিজ্ঞাপন হয়, কিন্তু মারাত্বক কিছু সফটওয়্যার বা স্ক্যামও হতে পারে। আপনাকে এই পপ-আপ গুলি ভুল স্থানে ক্লিক করার জন্য উৎসাহিত করে। কিছু কিছু বিজ্ঞাপনদাতা আপনার সামনে পপ-আপটি এমন ভাবে পরিবেশন করে যে আপনি যেটি ক্যানসেল বাটন নয়, সেটিকেই ক্যানসেল বাটন ভেবে ক্লিক করবেন, যার দ্বারা আপনি অনিচ্ছাবশতই ভুল কম্যান্ড দেবেন আপনার সিস্টেমকে।

পপ-আপের আকর্ষণীয় প্রদর্শনে ক্লিক করায় আপনাকে বিনা সূচনায় অর্থ ব্যায় করতে হতে পারে

  • সীতা একটি সঙ্গীতের ওয়েবসাইট, XYZ@music.com , থেকে অনলাইন গান শুনছিল। সেই সময়ে তার কাছে একটি পপ-আপ আসে, যাতে লেখা ছিল সর্বশেষ গানটি ডাউনলোড করতে। সে বিনা চিন্তায় সেই ফর্ম ভরে গানটি ডাউনলোড করে। মাসের শেষে সে দেখে যে তার ক্রেডিট কার্ডের বিলে সেই ওয়েবসাইটের নাম লিখে একটি মোটা অঙ্কের টাকা কাটা হয়েছে। সে সেই ওয়েবসাইটে অনেক বার কল করে সেই অর্থ ফেরানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না।

স্ক্রিপ্ট

একটি ওয়েবসাইটকে আরও বেশি ইন্টারঅ্যাকটিভ করতে স্ক্রিপ্টের ব্যবহার করা হয়। সাধারনত এটিকে ওয়েব ব্রাউজারের একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বিশেষত যখন ওয়েবসাইটের এক প্রান্তে থাকা ক্লায়েন্ট চায় গ্রাহকের সঙ্গে কথোপকথন করে প্রদর্শিত তথ্যকে সেই গ্রাহকের অনুপাতে পরিবর্তিত করতে। এই স্ক্রিপ্টকেই আবার ম্যালিসিয়াস কোড ব্যবহারের মাধ্যম হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে এই স্ক্রিপ্টই ব্রাউজারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আপনার কম্পিউটারে থাকা বিভিন্ন সিস্টেমকে নষ্ট করতে পারে।

প্লাগ-ইনঃ

প্লাগ-ইন হল ওয়েব ব্রাউজারে ব্যবহার করার জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন এবং নেটস্কেপ ওয়েব ব্রাউসার NPAPI স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তুত করেছে প্লাগ-ইন তৈরি করার জন্য। পরবর্তী কালে বিভিন্ন ওয়েব ব্রাউজারে এই স্ট্যান্ডার্ডের ব্যবহার হয়েছে। এই প্লাগ-ইন গুলির চালনা করার পদ্ধতি ActiveX এর মতই, কিন্তু তাদের ব্যবহার ওয়েব ব্রাউজারের বাইরে সম্ভব নয়। Adobe Flash হল এই রকম প্লাগ-ইনের একটি সহজ উদাহরন ।

অহেতুক প্লাগ-ইন ডাউনলোড করা এড়িয়ে চলুন

  • উদাহরন স্বরূপ, গ্রাহক অ্যাডোব ফ্ল্যাশ প্লেয়ার এর মত প্লাগ-ইন বিনা সঙ্কোচে ইন্সটল করতে পারেন কোন ওয়েবসাইটে ভিডিও বা গেম খেলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই প্লাগ-ইন টাই একটি কি-লগারের সাহায্যে ইন্সটল করা যেতে পারে, যাতে গ্রাহকের প্রতিবারের কি-স্ট্রোক (টাইপ করার উদ্দেশ্যে কি তে চাপ), আক্রমণকারীর কাছে পৌঁছে যাবে।

ইন- উজার প্রাইভেসি সেটিং

মোটামুটি সব ব্রাউজারেই ব্যবহারকারিদের জন্য ইন-ব্রাউজার প্রাইভেসি সেটিং থাকে । এর মধ্যে বিশেষত থাকে প্রাইভেট ব্রাউজিং, অ্যাকটিভিটি লগ কন্ট্রোল, কুকি ডিলিট করা এবং তা ছাড়াও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। যদিও ব্রাউজার প্রাইভেসি অপশন আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারেনা যদি কোন বাজে লোক রিমোট ভাবে আপনার উপর রিমোট স্পাইং বা মনিটরিং করে।

প্রাইভেট ব্রাউজিং

এটি আপনাকে ইন্টারনেটের ব্যবহার করতে দেয়, যেখানে কোন ব্রাউজিং তথ্য বা ইতিহাস মনে রাখবে না ব্রাউজার। যদি আপনার মনে হয় যে কেউ আপনার ব্রাউজিং এর উপর নজরদারি করছে, সেক্ষেত্রে এটি খুবই ব্যবহারযোগ্য। কিন্তু যদি আপনার উপর কেউ নজরদারি করে আপনার কাঁধের উপর থেকে, বা কোন স্পাই-ওয়ারের মাধ্যমে, সেক্ষেত্রে এই প্রাইভেট ব্রাউজিং আপনাকে কোনোরকম সাহায্য করতে পারে না। গুগুল ক্রোমে এই প্রাইভেট ব্রাউজিংকে বলা হয় ইনকগনিটো মোড, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে একে বলে প্রাইভেট, মোজিলা ফায়ারফক্স আর সাফারিতে নতুন প্রাইভেট উইন্ডো আছে প্রাইভেট ব্রাউজিং এর জন্য

ডু নট ট্র্যাক>

এটি আরও একটি সেটিং যা আপনাকে ত্রিপাক্ষিক ট্র্যাকিং যেমন বিজ্ঞাপনদাতা বা যেই সাইটে আছেন, তার আরও অন্য সাইটকে এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে । এই বৈশিষ্ট্য কেবল মাত্র ত্রিপাক্ষিক ট্র্যাকিংকে আটকাতেই কেবল সক্ষম যা বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীদের আচরণের ওপর নজর রাখে । যে ওয়েবসাইটটি আপনি দেখছেন তাদের আপনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা থেকে আটকানো যায় না এর দ্বারা। প্রতিটি ব্রাউজারেই এই ডু নট ট্র্যাকিং সেটিং থাকে, যেটিকে সক্রিয় করতে হয়।

ব্রাউজার হিস্ট্রি ডিলিট করা

মনে রাখবেন যে কেউ যদি আপনার কম্পিউটার পর্যবেক্ষণ করে, ব্রাউজার হিস্ট্রি ডিলিট করা বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও প্রায়শই ব্রাউজিং হিস্ট্রি ডিলিট করা মানে আপনার প্রাইভেসিকে বাড়ানো।

Page Rating (Votes : 9)
Your rating: