বর্তমান যুগে, যেখানে প্রতিটা মানুষের জীবনে সারাক্ষণ ইন্টারনেট জড়িয়ে রয়েছে, যেখানে ব্যাক্তিদের সমস্ত যোগাযোগ ইন্টারনেটের মাধ্যমে হচ্ছে, সেখানে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি () বা ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার, কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের সমস্যাকর ব্যবহার হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তিকে অনলাইন সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতি আসক্তিকর ব্যবহার, যা সাধারন জীবনে বা কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলিত হতে পারে, এই ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। এটাকে এমনও বলা যেতে পারে যে ইন্টারনেটে আসক্তি বা ইন্টারনেট ছাড়া যার দিন কাটে না।

ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ানোর কারন

একাকিত্ব/হতাশা

 অবিবাহিতারা একাকিত্বের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। তারা নিজের স্ট্যাটাস, অন্যের স্ট্যাটাস, লাইক করা বা সেয়ার করা বা পাওয়াতে মনোনিবেশ করে থাকে। ধীরে ধীরে এটা একটা নেশার মত হয়ে যায়, যা তার মানসিক ও শারীরিক উভয়তেই প্রতিফলিত হয়।

পলাতকি চিন্তা বা মানসিক চাপ

 বেশীর ভাগ মহিলা যারা কার্যালয়ে বা পারিবারিক জীবনে চাপে থাকেন তারা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে এবং এই ইন্টারনেটকেই নিজের চাপ থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় মনে করতে থাকে।

ইন্টারনেট বিষয়ক ক্রিয়াকলাপ

সোশ্যাল মিডিয়া

অধিকাংশ মহিলারাই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত। তাদের বেশীর ভাগই দিনের সুরুই করেন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল চেক করা দিয়ে আর তাদেরকে আজগুবি ছবি দিয়ে আপডেট করা নিয়ে, যেটা এই মুহূর্তের চল। এই মুহূর্তে মহিলারা যেটা করে থাকেন তা হল, প্রতিদিনের সামান্য থেকে সামান্য ঘটনা ফেসবুকে দিয়ে অধিক থেকে অধিক লাইক বা সেয়ার পাওয়া।

অনলাইনে কেনাকাটা

একটি মহিলার জীবনে কেনাকাটা সবথেকে আকর্ষণীয় ব্যাপার। অনলাইনে কেনাকাটা মহিলাদের সামনে প্রচুর উপায় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তারা বিভিন্ন জিনিস এবং বিভিন্ন অনলাইন কেনাকাটার পোর্টালে কিনুক বা না কিনুক নেড়ে চেরে দেখতে থাকে। এঁদের বেশীর ভাগই ইন্টারনেট ঘাটার সময় কমাতেই পারেনা।

অনলাইনে খেলা

অল্প কিছু সংখ্যক মহিলা অনলাইনে গেম খেলাতেও আসক্ত। বাস্তব জীবনে মেলামেশার থেকে অধিক এই মহিলারা অবসর সময় অনলাইনে গেম খেলে কাটাতে ভালো বাসে।

অনলাইনে গল্পগুজব

 অনেকেই গবগুজবের মাধ্যমকে ব্যবহার করে, কিন্তু কেউ কেউ গল্পগুজব বন্ধই করতে পারে না। অনেক সময়ে মহিলারা বাস্তবিক কথোপকথন বন্ধই করে দেয় এই কাল্পনিক কথোপকথনের থেকে আনন্দ লাভ করে।

ইন্টারনেটে আসক্তি সনাক্ত করার উপায় কি?

  • স্মার্ট ফোন ছাড়া ভালো না থাকার মানসিকতা
  • স্মার্ট ফোন ছাড়া চলতে না পারার প্রবনতা
  • সমানে স্মার্ট ফোনের দিকে বেশী সময় নিয়োগ করা
  • বন্ধুপরিজন ও পরিবারকে ভ্রুক্ষেপ না করা
  • যখন কম্পিউটারের সামনে থাকে না, তখন খালি খালি বা হতাশ বা বদমেজাজি অনুভব
  • বন্ধু ও পরিবারের কাছে ক্রিয়াকলাপ্প নিয়ে মিথ্যা কথা বলা
  • কাজে বা স্কুলে সমস্যা দেখা দেওয়া

একবার আপনি ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লে, আপনার শরীর ও মনের স্বাস্থের উপর তার বিস্তীর্ণ প্রভাব পরতে পারে, এমনকি সাইবার আক্রমনের কারণে আপনার জীবনও বিপন্ন হতে পারে।

কি করে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি কাটাবেন

  • আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সীমা ঠিক করুন
  • কোন অ্যাপ ব্যবহার করুন যা আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারকে পরিমাপ করবে এবং তা রোজ কমাতে থাকুন।
  • বন্ধু বা পরিজনের সাহায্য নিতে পারেন ইন্টারনেটের ব্যবহার দীর্ঘকালীন ভাবে কমিয়ে আনতে।
  • ইন্টারনেট গেম ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অন্তত দুই মাসের জন্য ব্যবধান রাখুন।
  • ইন্টারনেটে ব্রাউস করার সময় ঠিক করে নিন আর সেই সময় সীমা কখনই উল্লঙ্ঘন করবেন না।
  • ভিডিও দেখা, ল্যাপটপে ইমেল পাঠানো, বই পড়া এই সব কাজে মনোনিয়োগ করুন।
  • এমেলের আর বিভিন্ন অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন।
  • সেই সমস্ত ওয়েবসাইট যারা আসক্তি জাগায়, তাদের থেকে দূরে থাকুন।
  • বিভিন্ন বিষয়ের উপর, চাকরী কেন্দ্রিক বই বা ম্যাগাজিন পরতে অভ্যাস করুন। এতে আপনার বই পড়ার মানসিকতার বৃদ্ধি হবে।
  • ইন্টারনেট ব্যবহার কমালে কত টাকা আপনি সাশ্রয় করতে পারবেন, সে বিষয়ে চিন্তা করুন।
  • একটা তালিকা টৌড়ী করুন যেগুলোর উন্নতি হবে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার কমে গেলে।
  • আপনার শোবার ঘর থেকে ইন্টারনেট চালিত ডিভাইস সরিয়ে দিন।
  • আপনার ঘুমের সময় সঠিক করুন। অনেক সময়েই ব্যাক্তি ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে কম ঘুমান। এই কাজে আপনার দিনের নিয়মকে ঠিক করা সম্ভব হবে, ফলে আপনার শরীর সাস্থের উন্নতিও হবে।
Page Rating (Votes : 4)
Your rating: