প্রত্যেকটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে ওয়াইফাই।ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বিশেষ করে মহিলারা বাড়িতে, ব্যবসাতে, কেনাকোটার জন্য ,ব্যাঙ্কের কাজে,সমন্বয় রক্ষার জন্য ও যোগাযোগের কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ওয়াইফাই ডিভাইসের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত ডেটাকে সুরক্ষিত রাখতে হলে নিরাপদ ওয়াইফাই সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খুব কম ডিভাইসই তাদের ডিফল্ট কনফিগারেশন মোডে নিরাপদ। ব্যবহারকারীরা বিশেষ করে মহিলারা যেহেতু এই ধরনের ডিভাইসের সিকিউরিটি লেভেল সেট করার বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন নন তাই তারা সহজেই সাইবার হামলার শিকার হতে পারেন। আর সাইবার অপরাধীরা তাদের বেআইনী কাজকর্ম চালানোর জন্য এই ধরনের অসুরক্ষিত ডিভাইসই খুঁজে থাকে ।

যে কেউ তাদের কমপিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলে ওয়াইফাই সংযোগ করলেই সেই আনসিকিউরড অ্যাকসেস পয়েন্টে (ওয়্যারলেস রাউটার)কানেকটট করতে পারে । যদি এই রাউটারে ডিফল্ট সেটিংস দেওয়া থাকে বা সেটি অসুরক্ষিত হয়, তাহলে ওয়াইফআই-এর আওতায় থাকা যে কেউ সরাসরি এটির সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারবে। এই ধরনের অসুরক্ষিত নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ ঘটালেই আক্রমণকারীরা ই-মেল পাঠাতে থাকবে, শ্রেণিবদ্ধ/গোপনীয় তথ্য ডাউনলোড করতে থাকবে, নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা অন্য কপিউটারগুলিকেও আক্রমণ করবে। অন্যদের ক্ষতিকারক কোড পাঠাতে আরম্ভ করবে। আক্রান্তের কমপিউটারে দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রনের জন্য ট্রোজান বা বোনেট ইনস্টল করে দেবে।

ফ্রি ওয়াইফআই হটস্পটে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে

সোশ্যাল মিডিয়া বা চ্যাটিং অ্যাপ্লিকেশনের এর জন্য অনেক সময় মহিলাদের প্রবণতা থাকে প্রকাশ্য স্থানে ফ্রি ওয়াইফাই কানেকশন ব্যবহার করার। রেলস্টেশন বা এয়ারপোর্টে পাবলিক ওয়াইফাই কানেকশন ব্যবহার করলে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়। এই ধরনের নেটওয়ার্ককে সফলভাবে ব্যবহার করে আক্রমণকারীরা সংবেদনশীল তথ্য যেমন ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পাসওয়ার্ড, চ্যাট ম্যাসেজ, ইমেল ইত্যাদি হাতিয়ে নিতে পারে। তাই তথ্যের নিরাপত্তার খাতিরে এই ধরনের পাবলিক ওয়াইফাই এড়িয়ে যাওয়াই উচিত এবং বদলে নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা উচিত। এই ধরনের ফ্রি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কয়েকটি টিপস

• কখনও পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় অটো কানেক্ট করবেন না
• পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় নিরাপদ ওয়েবসাইটগুলোই শুধু দেখুন
• তথ্য ভাগ করাকে নিস্ক্রিয় করুন
• আপনার যখন প্রয়োজন নেই তখন ওয়াইফাইকে বন্ধ রাখুন
• সংবেদনশীল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ব্যক্তিকে অনুসরণ

মোবাইল ফোনের মতো ওয়াইফাই ডিভাইসেরও ইউনিক আইডেন্টিফায়ার রয়েছে যা ট্র্যাকিং-এর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। ওয়াইফাই হটস্পটকে ব্যবহার করে কাউকে ভয় দেখানো ও হেনস্থা করার মতো অপরাধ সংগঠিত হতে পারে। কোনো পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য অনেক সময় কোনো কোনো ওয়েবসাইট আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাইতে পারে, যেমন নাম, বয়স, পিন কোড বা ব্যক্তিগত পছন্দ।

সংস্থার মাধ্যমে : সংস্থাগুলি খুব সহজেই কোনো ব্যক্তির ইন্টারনেট ব্রাউজিং সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য, অভ্যাস ইত্যাদি জাতীয় নিরাপত্তার নামে ওই তথ্য ব্যক্তির অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করতে পারে।

হ্যাকারের মাধ্যমে : আক্রান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য চুরি এবং সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক তথ্যের অপব্যবহার।

ওয়্যারলেস যোগাযোগের জন্য রাউটার কনফিগার করার ক্ষেত্রে কয়েকটি

নিরাপদ পদক্ষেপ

অ্যাকসেস পয়েন্টে ডিফল্ট ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন

বাড়িতে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক এবং ব্রডব্যান্ড রাউটার ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়, যাতে কেবলমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তি নেটওয়ার্কে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে পরিবর্তন করতে পারেন।

  • ডিফল্ট এসএসআইডি পরিবর্তন করুন এবং আপনার নেটওয়ার্কের নাম প্রকাশ্যে আনা এড়িয়ে চলুন।প্রত্যেকটি অ্যাক্সেস পয়েন্ট এবং রাউটার একটি নেটওয়ার্ক নাম ব্যবহার করে। যাকে বলা হয় সার্ভিস সেট আইডেন্টিফায়ার (এসএসডি)। শুধু এসএসডি জেনে আপনার নেটওয়ার্ককে আক্রমণ করা সম্ভব নয়। তবে এটি আপনার সেটের দূর্বল কনফিগারেশনের একটা লক্ষণ।
  • ওয়াইফাই ব্যবহার না হলে বন্ধ করে দিনদীর্ঘ সময় ধরে আপনার বাড়ির ওয়াইফাই ব্যবহার না করা হলে বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। এর ফলে অপব্যবহার রোধ করা যাবে। ব্যবহার না হলে অ্যাক্সেসপয়েন্টও শাটডাউন করে দিন।
  • বাড়ির ওয়াইফাইয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল আইপি অ্যাড্রেসের বদলে স্থায়ী আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করুনঅধিকাংশ বাড়ির নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ডিভাইসে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিসট্রেটর তার আইপি অ্যাড্রেসের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল হোস্ট কনফিগার প্রোটোকল (ডিএইচসিপি) ব্যবহার করে। রাউটারে ডিএইচসিপি বন্ধ করে একটি স্থায়ী ব্যক্তিগত আইপি অ্যাড্রেস সেট করুন। তারপর এই সীমার মধ্যে থাকা প্রতিটি ডিভাইসকে একটি অ্যাড্রেস দিয়ে কনফিগার করতে হবে।
  • সব সময় এনক্রিপশনের জন্য শক্তিশালীপাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।পাসওয়ার্ডে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখা সহজ এমন কিছু বাক্য বা বাক্যাংশ পাসওয়ার্ডে ব্যবহার করুন।
  • ওয়াই-ফাই ডিভাইসগুলি ম্যাক(এমএসি) অ্যাড্রেস ফিল্টারিং-এ সক্ষম করুনঅ্যাকসেস পয়েন্ট এবং রাউটারগুলি তাদের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত ডিভাইসগুলির ম্যাক (এমএসি) অ্যাড্রেসের খোঁজ রাখে।
  • বাড়তি সুরক্ষার জন্য ফায়ারওয়াল এবং অ্যান্টি ভাইরাস ব্যবহার করুনএকটি অ্যান্টি ভাইরাস গেটওয়ে এবং ফায়ারওয়াল দিয়ে তারবিহীন নেটওয়ার্ককে তারযুক্ত নেটওয়ার্কের থেকে আলাদা করুন।
  • ডিভাইসের মধ্যে উপলব্ধ ডিফল্ট নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করুন।সমস্ত ওয়াই-ফাই ডিভাইসে কিছু ধরনের এনক্রিপশন থাকে। তাদের সক্রিয় করুন।ফার্মওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন।
  • ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে সংবেদনশীল তথ্যের জন্য এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করুন। এনক্রিপশনের জন্য অ্যাকসেস পয়েন্ট সমর্থিত সবোর্চ্চ কি সাইজ ব্যবহার
  • কেবলমাত্র প্রয়োজনের সময় ফাইল শেয়ারিং এবং এয়ারড্রপ ব্যবস্থা চালু রাখুন।

ইন্টারনেট নিরাপত্তাতে সমস্যা এবং পাবলিক ওয়াই-ফাইয়ে ঝুঁকি বাড়ছে। কয়েকটি সর্তকতা গ্রহণ করলে আপনার তথ্য নিরাপদে থাকবে।

Page Rating (Votes : 2)
Your rating: